স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধের হার্ড পয়েন্ট ভাঙ্গনে গঠিত তদন্ত কমিটি চূড়ান্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়েছে। রোববার(২১/০৮/২০১১) পানিসম্পদ মন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেনের সভাপতিত্বে সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধের ভাঙনের কারণ এবং এর সমাধানে গঠিত তদন্ত কমিটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন মাল্টিমিডিয়া প্রেজেনটেশন সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় তদন্ত কমিটির প্রধান আইডব্লিউএম এর নির্বাহী পরিচালক ড. মনোয়ার হোসেন উত্থাপিত প্রতিবেদনে ভাঙনের কারণ তুলে ধরে সুপারিশ করা হয়।
ভাঙ্গনের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, নদীর গতিপথ পরিবর্তন এবং অস্বাভাবিকভাবে হঠাৎ করে মাটির নিচে ঘূর্র্ণাবর্ত তৈরি হয়ে বড় ধরনের গর্তের সৃষ্টি হয়। প্রতিবেদনে দীর্ঘ ও স্বল্পমেয়াদি এবং স্থায়ী সুপারিশ করা হয়েছে। সুপারিশগুলো হলো, হার্ড পয়েন্টের উজানের অংশে প্রবাহের গতিপথ পরিবর্তনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং শুষ্ক মৌসুমে বাঁধ শক্তিশালী করার কাজ করা। চলতি বর্ষা মৌসুমে বাঁধ ভাঙ্গনরোধে স্বল্পমেয়াদি সুপারিশে বলা হয়েছে, মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ব্যবহার, নিয়মিত ব্যাথমেট্রিক সার্ভে পরিচালনা, হার্ডপয়েন্টের অপর পাড়ে ডুবোচরটি ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে পানির চাপ কমানো এবং হার্ড পয়েন্টের উপরের রাস্তা দিয়ে ভারি যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করতে হবে।
পানিসম্পদ মন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন বলেন, যমুনা হলো পৃথিবীর আনপ্রেডিক্টেবল নদীগুলোর অন্যতম। এ নদী শাসনের জন্য ক্যাপিটেল ড্রেজিংয়ের কোনো বিকল্প নেই। তাই ক্যাপিটেল ড্রেজিং এর মাধ্যমে হার্ড পয়েন্ট অঞ্চলকে ভরাট করে সিরাজগঞ্জ শহরকে রক্ষা করা হবে। একই সাথে যমুনা নদী থেকে বিশাল পরিমাণ ভূমি উদ্ধার করা সম্ভব হবে।
পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান তালুকদার এমপি, সচিব শেখ মো. ওয়াহিদ উজ জামান, বিশ্ব ব্যাংক ঢাকার প্রতিনিধি এস এ এম রফিকুজ্জামান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালকসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ এসময় উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধের হার্ড পয়েন্টের বিএল স্কুল সংলগ্ন স্থানে গত ১৮ জুলাই মধ্যরাতে ১৫০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ৫০ ফুট প্রশস্থ এলাকা আকস্মিকভাবে ভেঙ্গে যাওয়ার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে কমিটিকে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। কমিটিকে বর্তমান ভাঙনের কারণ এবং স্থায়ী সমাধান সম্পর্কে সুপারিশ করতে বলা হয়েছিল।
কমিটির অপর চার সদস্য হলেন- পানি উন্নয়ন বোর্ড (পশ্চিম অঞ্চল) অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো: আজিজুল হক, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সৈয়দ আবদুল মমিন, সিইজিআইএস’র উপ-নির্বাহী পরিচালক ড. মমিনুল হক সরকার এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডিজাইন সার্কেল-৬ এর নির্বাহী প্রকৌশলি মো: মোতাহার হোসেন।
উল্লেখ্য, দেশের মৃত প্রায় নদ-নদীগুলিকে প্রবাহমান করার লক্ষ্যে নদী খননের মহা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বর্তমান সরকার। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহমান নদীগুলির মধ্যে অন্যতম নদী যমুনা নদী। এই যমুনা নদীকে প্রবাহমান রাখার লক্ষ্যে এবং কৃষি উৎপাদন, পরিবেশ রক্ষা, সেচ সম্প্রসারণ ও খরা মোকাবিলাসহ নদী পাড়ের মানুষের জীবনধারা স্বাভাবিক রাখতে নদীর তলদেশে উচু চর খনন, নদী ভাংগন প্রতিহত ও হ্রাস করা এবং ক্ষীণধারা চ্যানেল বন্ধ করার নিমিত্তে বাঁধ নির্মাণ, বাঁধ সংস্কারসহ প্রায় ১হাজার ২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্ট হতে বঙ্গবন্ধু ব্রিজের ভাটিতে ধলেশ্বরী নদীর অফটেক পর্যন্ত ২০ কি: মি: এবং নলীন বাজারের সন্নিকটবর্তী ২ কি: মি: দৈর্ঘ্যসহ ২২ কি: মি: দৈর্ঘ্যে ক্যাপিটেল ড্রেজিং কাজ বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে বর্তমান সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় প্রাথমিক পর্যায়ে নলিন বাজারে ২ কি: মি: দৈর্ঘ্যে যমুনা নদীতে ৩৯ কোটি টাকা চুক্তি মূল্যে এরইমধ্যে ড্রেজিং কাজ শুরু হয়েছে। সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্ট হতে বঙ্গবন্ধু ব্রিজের ভাটিতে ধলেশ্বরী নদীর অফটেক পর্যন্ত ২০ কি: মি: নদী খননের জন্য এরমধ্যে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে এবং বিভিন্ন দেশের বড় বড় ড্রেজিং কোম্পানি এতে অংশগ্রহণ করেছে। অতি শিগগিরই মূল্যায়ন কমিটির মাধ্যমে সর্বনিম্ন দরদাতাকে কার্যাদেশ প্রদান করা হবে এবং বর্ষার পরে কাজ শুরু করা হবে।
@২২ আগস্ট, ২০১১