বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম প্র্রান্তে অবস্থিত সিরাজগঞ্জ জেলা উত্তরবঙ্গের প্রবেশ দ্বার হিসেবে সুপরিচিত। যমুনা নদী বিধৌত এ জেলার ভৌগলিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গন বৈচিত্রময়। এ জেলাটি দুর্যোগপ্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত। জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে ৫টি উপজেলাই যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত। ফলে নদী ভাঙ্গন এ জেলার জনসাধারণের নিত্য সঙ্গী। এছাড়া বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে চলনবিলের অবস্থান। ভৌগলিক কারণেই বন্যা, খরা, নদী ভাঙ্গনসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে এ জেলার জনসাধারণ জর্জরিত। সব মিলিয়ে দারিদ্র, বেকারত্ব এবং বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ এ জেলার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পথে অন্তরায়।
বেলকুচি থানায় সিরাজউদ্দিন চৌধুরী নামক এক ভূস্বামী (জমিদার) ছিলেন। তিনি তাঁর নিজ মহালে একটি ‘গঞ্জ’ স্থাপন করেন। তাঁর নামানুসারে এর নামকরণ করা হয় সিরাজগঞ্জ। কিন্তু এটা ততটা প্রসিদ্ধি লাভ করেনি। যমুনা নদীর ভাঙ্গনের ফলে ক্রমে তা নদীগর্ভে বিলীন হয় এবং ক্রমশঃ উত্তর দিকে সরে আসে। সে সময় সিরাজউদ্দীন চৌধুরী ১৮০৯ সালের দিকে খয়রাতি মহল রূপে জমিদারী সেরেস্তায় লিখিত ভুতের দিয়ার মৌজা নিলামে খরিদ করেন। তিনি এই স্থানটিকে ব্যবসা বাণিজ্যের প্রধান স্থানরূপে বিশেষ সহায়ক মনে করেন। এমন সময় তাঁর নামে নামকরণকৃত সিরাজগঞ্জ স্থানটি পুনঃ নদীভাঙ্গণে বিলীণ হয়। তিনি ভুতের দিয়ার মৌজাকেই নতুনভাবে ‘সিরাজগঞ্জ’ নামে নামকরণ করেন। ফলে ভুতের দিয়ার মৌজাই ‘সিরাজগঞ্জ’ নামে স্থায়ী রূপ লাভ করে। কথিত আছে মরহুম সিরাজউদ্দিন চৌধুরী কেবল একজন ধনী লোকই ছিলেন না তিনি প্রজাবৎসল, অতীব ধর্মপরায়ন এবং পীরভক্ত লোক ছিলেন। অনেকে মনে করেন সিরাজগঞ্জের দরগা রোডের মাজার শরীফ উক্ত চৌধুরী পীর সাহেবের। কেউ কেউ মনে করেন উক্ত মাজার শরীফে অবস্থানরত রুহ মোবারক, দেহাবশেষ চৌধুরী সাহেবের নিজের যা বেলকুচি হতে পরবর্তী সময়ে আনীত ও সমাহিত। সকল সম্প্রদায় ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই উক্ত দরগা ও মাজার শরীফকে সম্মান করে থাকেন। অদূরেই হিন্দুদের ‘মহাপ্রভুর আখড়া’ অবস্থিত। তার অনতি দূরেই পশ্চিম-দক্ষিণ দিকে বাণীকুঞ্জে সুসাহিত্যিক ও সুকবি মরহুম সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজীর মাজার শরীফ অবস্থিত।
(সিরাজগঞ্জের এই বিশেষ লেখাটি জেলা তথ্য বাতায়ন থেকে নেওয়া)